স্ট্রোক
স্ট্রোকের
এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত
বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের
ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮
ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে
থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের
মধ্যে স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
কারণ। বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন
এবং প্রতি ছয় সেকেন্ডে কোথাও
না-কোথাও কেউ স্ট্রোকে
আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে
প্রায় ৬০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে মারা
যায় এবং এই সংখ্যা এইডস,
ম্যালেরিয়া ও টিবির সম্মিলিত
মৃত্যুর সংখ্যা থেকেও বেশি।
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের
ভাষায় সেরিব্রোভাসকুলার
অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। সেরিব্রাল
অর্থাৎ মস্তিষ্ক, ভাসকুলার অর্থ
রক্তনালি এবং অ্যাকসিডেন্ট
মানে দুর্ঘটনা। সুতরাং মস্তিষ্কের
রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই
স্ট্রোক বলা যায়। আমাদের দেশে
প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে
স্ট্রোক একটি হূৎপিণ্ডের রোগ,
বাস্তবে এ কথা মোটেই সত্য নয়।
স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের
রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ।
স্ট্রোকের ১০ কারণ?
উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়মিতভাবে
উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সেবন স্ট্রোকের
সব থেকে বড় কারণ—
► ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুল
সেবন।
► অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক
চাপে থাকা।
► হূদেরাগ, যেমন—হার্ট অ্যাটাক,
এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, ভাল্ব
প্রতিস্থাপন, হার্টে জন্মগত ছিদ্র।
► অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
► স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস,
পুরুষ এবং বয়স্কদের অধিক মাত্রায়
ঝুঁকি দেখা যায়।
► রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি,
অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত
মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ।
► কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িকেও
এর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রসবকালীন একলাম্পশিয়া নামের
জটিলতা হলে স্ট্রোকের আশঙ্কা
বেড়ে যায়।
► কিছু কিছু ওষুধ বা রোগের কারণে
রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে
যেতে পারে, যেমনâ
€”অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি
ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে
পারে।
► মাদক সেবনকারীর রক্তক্ষরণের
হার বেশি দেখা যায়।
স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত
বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের
ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮
ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে
থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রক্ত এক-দুই
মাসের ভেতর শুকিয়ে যায়।
মস্তিষ্কের অনেকখানি
জায়গাজুড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে
গেলে রোগী শুরুতেই মারা যেতে
পারে। স্ট্রোকের পাশাপাশি
হূৎপিণ্ড বা ঘাড়ের রক্তনালি বন্ধ
থাকলে পরবর্তী এক বছরের ভেতর ৫
থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর আবার
স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বল্পমাত্রার স্ট্রোকের রোগী ২৪
ঘণ্টার ভেতর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে
যায়।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ
কিছু রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি সব
রোগীর জন্য অবশ্যই সিটি স্ক্যান
পরীক্ষা করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে
সিটি স্ক্যানে সাদা দেখায় আর
রক্ত সরবরাহ কমে গেলে সিটি
স্ক্যানে সেই জায়গা কালো
দেখা যায়। আক্রান্ত জায়গার
চারপাশে পানি জমে ইডিমা হলে
কালো দেখায়। এই ইডিমা
চারপাশের মস্তিষ্কের ওপর আরও
বেশি চাপ দেয়। ইস্কেমিক
স্ট্রোকের প্রথম ছয় ঘণ্টাকে হাইপার
একিউট বলা যায়। এ সময়ে বেশ
কিছুসংখ্যক রোগীর সিটি স্ক্যানে
কিছু সমস্যা পওয়া যায় না, সেসব
ক্ষেত্রে পুনরায় স্ক্যান করতে হয়।
এমআরআই (ডিডব্লিউআই) করে স্ট্রোক
ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে খুব
ভালো ধারণা পাওয়া যায়।
ঘাড়ের রক্তনালিতে কোনো ব্লক
আছে কি না জানার জন্য ঘাড়ের
রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার
জন্য ইকো পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত
জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে
নিতে হবে। প্রয়োজনে
এনজিওগ্রাম পরীক্ষাও করতে হবে।
এ
ছাড়া রক্তের চর্বির পরিমাণ,
রক্তের গ্লুকোজ, স্ট্রোকের প্রবণতা
বোঝার জন্য কিছু মার্কার দেখা
যেতে পারে।
স্ট্রোকে সাধারণত ব্রেনের
নিচের দিকের ব্যাজাল
গ্যাংলিয়া এবং থ্যালামাস নামক
জায়গা বেশি আক্রান্ত হয়, বাকি
মস্তিষ্কে যেকোনো জায়গায়ই
স্ট্রোক হতে পারে। ব্রেনস্টেমের
স্ট্রোক সর্বাধিক বিপজ্জনক, কারণ
ব্রেন স্টেমে শ্বাস-প্রশ্বাস,
হূৎপিণ্ডের চলাচল ও জ্ঞানরক্ষার
কেন্দ্র অবস্থিত।
হঠাৎ স্ট্রোক হলে?
► রোগীকে কাত করে শুইয়ে
দেবেন।
► এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ
মুখে দেবেন না। কারণ, এগুলো
শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি
করে।
► বরং মুখে জমে থাকা লালা, বমি
সুন্দর করে পরিষ্কার করে দিতে
হবে।
► টাইট জামা কাপড় ঢিলা করে
দিন।
► হাসপাতালে যাওয়ার সময়
খেয়াল করে রোগীর আগের
চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে
নিয়ে নিন।
কেন অতিসত্বর চিকিৎসা করাতে
হবে?
স্ট্রোক হলে আক্রান্ত এলাকার
মস্তিষ্ক কোষের বেঁচে থাকার জন্য
অক্সিজেন প্রভৃতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি
উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত
সরবরাহ দুই মিনিটের বেশি বন্ধ
থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে
ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত এলাকার
চারদিকে একটি প্রচ্ছায়া বলয়ের
সৃষ্টি হয়, দ্রুত চিকিৎসায় প্রচ্ছায়া
বলয়কে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে তিন হ্যাঁ
আর দুই না বলে এক হাতের পাঁচ আঙুল
তুলে ধরি—
হ্যাঁ বলুন
► নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
(কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটবেন)।
ব্যায়াম করে কয়েক কেজি বাড়তি
ওজন ঝেড়ে ফেলা যাক।
► যেকোনো পরিবেশে হাসিখুশি
থাকুন
► দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রাখুন।
ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে
► শাকসবজি
► অল্প ভাত
► পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া বাদে
যেকোনো মাছ
► বাচ্চা মুরগি
► ডিমের সাদা অংশ খেতে
পারেন।
না বলুন
► ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুলকে
না বলুন।
খাওয়া যাবে না—
► চর্বি (তেলযুক্ত খাবার) ও শর্করা
(মিষ্টি খাবার)-যুক্ত খাবারকে
অপছন্দ করুন।
► ফাস্টফুড, বাদাম
► সন্দেশ, রসগোল্লাজাতীয়
মিষ্টি।
► দুধ, ঘি, পোলাও, বিরিয়ানি
► পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া
► গরু বা খাসির মাংস
► নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার
► ডিমের কুসুম প্রভৃতি রসনাযুক্ত
খাবার খাওয়া উচিত নয়।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন