Health Talk丨স্বাস্থ্য কথা http://bdhealthtalk.blogspot.com/2016/03/blog-post_8.html

শিশুর যেভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়।

শিশুর যেভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়।

দু রকমের থ্যালাসেমিয়াঃ

থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে, আলফা থ্যালাসেমিয়া
ও বেটা থ্যালাসেমিয়া।

যাদের
হিমোগ্লোবিনে আলফা অথবা বিটা চেইন
পরিমাণে কম থাকে, তাদের বলা হয় আলফা
অথবা বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা
থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ
মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা
থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা
বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের
শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে
এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

থ্যালাসেমিয়ায় কি হয়ঃ

রক্তের লোহিত কণিকার আয়ুষ্কাল তিন
মাস। লোহিত কণিকা অস্থিমজ্জায় অনবরত
তৈরি হচ্ছে এবং তিন মাস শেষ হলেই
প্লীহা এ লোহিত কণিকাকে রক্ত থেকে
সরিয়ে নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত
রোগীর লোহিত কণিকার আয়ুষ্কাল অনেক
কমে যায়। তাদের হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো
তৈরি না হওয়ায় লোহিত কণিকাগুলো
সহজেই ভেঙে যায় এবং অস্থিমজ্জার
পক্ষে একই হারে লোহিত কণিকা তৈরি
সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে একদিকে যেমন
রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে প্লীহা
আয়তনে বড় হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে
অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়ে হৃৎপিন্ড,
প্যানক্রিয়াস, যকৃত, অন্ডকোষ ইত্যাদি
অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।

থ্যালাসেমিয়া হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ
ও উপসর্গগুলো দেখা যায়ঃ

-অবসাদ অনুভব
-দূর্বলতা
-শ্বাসকষ্ট
-মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
-অস্বসিত
-ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
-মুখের হাড়ের বিকৃতি, নাকের হাড় দেবে
যাওয়া(মঙ্গোলয়েড ফেস)
-শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া
-পেট ফুলে যাওয়া
-গাঢ় রঙের প্রস্রাব
চিকিৎসাঃ থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
বলতে রক্ত পরিসঞ্চালন। আর মাঝে মাঝে
অতিরিক্ত পরিসঞ্চালন জনিত আয়রণ
উদ্বৃত্তি ঠেকাতে আয়রন চিলেশন থেরাপী,
সাধারণত ডেসফেরিঅক্সামিন দেওয়া হয়।
ওষুধের চিকিৎসা বলতে এটুকুই। প্লীহা বড়
হয়ে গেলে অপারেশন করে সেটা ছোট করে
দেওয়া হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হারটা কমে
আসে কিছুটা। মূলত বোন ম্যারো
প্রতিস্থাপন হলো এর স্থায়ী চিকিৎসা।
এটা খুবই ব্যায় বহুল। আমাদের পাশের দেশে
বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনে খরচ পড়ে প্রায়
২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। বাংলাদেশে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজী বিভাগে ও
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতালে
বোনম্যারো চিকিৎসা শুরু করার জন্য
সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি
চলছে। এটা আশার কথা।
নিয়মিত যা করণীয়ঃ
নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রাম/
ডেসিলিটার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা নেওয়া।
শিশুরোগীর ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস অন্তর
উচ্চতা, ওজন, লিভার ফাংশন টেস্ট করাতে
হবে।
আট থেকে ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর রক্তে
লৌহের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।

রক্তে লৌহের মাত্রা এক হাজার ন্যানো
গ্রাম বা মিলি লিটারের ওপরে হলে
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করা।

শিশুর প্রতিবছর বুদ্ধি ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ
করা।

প্রতিরোধে চাই সচেতনতাঃ

এ রোগ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই।
সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি বাড়াতে প্রচার
মাধ্যমের ব্যাপক অংশ গ্রহন প্রয়োজন।
টেলিভিশন, পত্রিকা, রেডিও, ইন্টারনেট
ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ,
ফেইসবুকে ব্যাপক আলোচনা দরকার।

বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগ
নীরিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোগ নির্ণয় নিশ্চিতকরতে
হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে অন্তত
জেনেটিক পরামর্শকেন্দ্র স্থাপন করা
দরকার। এ রোগটি একেবারে নির্মূল করতে
জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের কোনো বিকল্প
নেই।

আমাদের দেশে এই বিশাল সংখ্যার
রোগীর যদি আর বৃদ্ধি না চাই, তাহলে এখনই
আইন করে আন্ত-থ্যালাসেমিক পরিবারে
বিয়ে বন্ধ করতে হবে।
ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের বাহকদের মধ্যে
বিয়ে বন্ধ করতে হবে বা বিয়ে করলেও
তারা সন্তান নিতে পারবে না।

আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর
চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সহজ। তাই
একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও
পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ দরকার।

সূত্রঃ ইন্টারনেট

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

Unknown
পোস্ট করেছেনঃ Unknown
পোস্ট ক্যাটাগরিঃ
0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

টেক জান প্রো কী?